Social Icons

প্রেম, থাকো তবু কল্পনায়

মধ্য রাতের স্তব্ধতা ভেঙে বেজে উঠল টেলিফোন,
ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই
ইথারে কম্পন তুলে ওপার হতে যখন
ভেসে এলো তোমার কন্ঠস্বর
বুকের অলিন্দে তখন নেচে উঠল সহস্র ভ্রমর-
যেন কতদিন প্রতীক্ষায় আছি,
আছি তোমার অপেক্ষায়।
: কেনো এভাবে ভাবো,
কেনো করো প্রতীক্ষা আমার ?
: কেনো যে ভাবি- সেতো তুমিও জানো।
তুমি আমার শেকড়-
তুমি ছাড়া আমি অস্তিত্বহীন;
তুমি কাণ্ড আমার-
তুমি না থাকলে পারি না দাঁড়াতে;
তুমি ছাড়া আমার প্রকাশ বিকাশ
এমনকি বেঁচে থাকা অসম্ভব।
: আজতো তুমি এক প্রতিষ্ঠিত মানুষ-
সবাই চেনে, জানে, সমীহ করে…
: সব তো তোমরই জন্য।
অর্থ-বিত্ত-প্রতিপত্তিহীন এক পরিবারে জন্ম,
আদর্শ আর দারিদ্রের সমান্তরাল বয়ে চলা সংসারে
আদর্শকে আঁকড়ে সৃজনশীলতার পথে হেঁটেছি অবিচল;
হঠাৎ এক মহাপ্রলয়ে প্রাচুর্য্যরে কাছে পরাস্ত হয়ে
ভালোবাসা হারলাম, তোমাকে হারালাম।
তারপর কক্ষচ্যুত হয়ে, গৃহহীন আশ্রয়হীন হয়ে
ভাগাড়ে পড়ে ছটফট করছিলাম,
একদিন তুমিই আবার টেনে তুললে
মমতার আঁচলে মুছে দিলে যন্ত্রনার দাগ,
পুনর্বার দীক্ষা দিলে সৃষ্টিশীল মানুষ হবার-
তারপর থেকে ক্রমাগত হেঁটে চলেছি ক্লান্তিহীন,
চলেছি আবাদ করে অনুর্বর শুষ্ক জমিন,
পাহাড়ের পাথর শরীরে করে চলেছি কেয়ার বাগান-
শুধু তোমাকে ফিরে পাবো বলে, একদিন
সপ্তডিঙ্গায় চড়ে স্বর্গের উপকুলে ভেসে বেড়াব বলে।
আমাদের কবে দেখা হবে?
কি হলো ? কিছু বলছো না যে !
অপ্রতিরোধ্য বাসনার পাপড়ি গুলোকে
সংযমের শক্ত খোলাসে ঢেকে রেখেছি বহুদিন,
এবার আমার চারপাশে অধৈর্য বাতাস-
বন্ধ ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে করেছে চুরমার।
প্রতিটি গ্রন্থি তোমার স্পর্শের আশায় অপেক্ষমান
ব্যকুল ভাবাবেগে!
বললে নাতো, কবে দেখা হবে ?
: এমন করে বলো না লক্ষীটি,
আমারও বড্ড ইচ্ছে করে তোমার কাছে আসতে
জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ ধারায় তোমাকে নিয়ে ভিজতে;
সাধ হয় পৃথিবীর সবগুলো বাগানের সমস্ত গোলাপ দিয়ে
তোমাকে সংবর্ধিত করি,
শ্রান্ত দেহের ঘাম মুছিয়ে দেই মমত্বের ছোঁয়ায়।
কিন্তু আমি যে বড় অসহায় !
কিছুতেই পারি না তোমার আমার মাঝের এই দূরত্বকে
শূন্য করে দিতে, বিলীন করে দিতে,
তোমার খুব কাছে আসতে, ছুঁয়ে দিতে।
: তোমার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে
তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে, বিশ্বাসী হয়ে ভালোবাসায়
কতদিন অপেক্ষায় আছি-
তুমি কি পারো না বৈভবের বৃত্ত ভেঙে
চলে আসতে আমার প্রাচুর্যহীন প্রেমময় দুনিয়ায় !
: না, পারি না। সত্যি পারি না আমি
ইতি টানতে তোমার অপেক্ষার কিংবা
আমার চিরন্তন বাসনার; পারি না
এক চিলতে রোদ্দুর হয়ে দিনকে করতে আলোকিত
রাতকে জোৎস্নাময়- চাঁদনী হয়ে।
আমি শুধু তোমার স্বপ্নের মাঝে
আকাশের নীল ছঁয়ে উড়ে বেড়াতে পারি,
পারি কল্পনার রঙে রাঙাতে তোমার বিবর্ণ মুহূর্ত।
বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই অসহায়-
তোমাদের পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব নেই আমার,
বস্তুতঃ আমি অনেক আগেই হারিয়ে গেছি
পৃথিবীর আলোময়, সুখময় সবুজ প্রান্তর হতে।
সেদিন মনে হয়েছিলো, তুমি ছাড়া আর কারও ঘরে
বাঁচতে পারবো না, স্বস্তিতে পারবো না নিঃশ্বাস নিতে;
তাইতো লাল বেনারসী আর অজস্র অলঙ্কারে
বিয়ের আসওে যাবার বদলে চলে গেলাম
পৃথিবী হতে অনেক দূরে, অসীম শূন্য গর্ভে-
যেখান থেকে পৃথিবীর আলো-ছায়ায় ফেরা যায় না কখনও।
: তাহলে এই যে উপস্থিতি, তোমার টেলিফোন,
আমাকে আশ্বস্ত করা, সান্ত্বনা দেয়া, ভরসা দেয়া-
একি সত্যি নয় !
: মিথ্যে তো নয় কোনো কিছু।
পার্থিব প্রতুলতায় আমাদের মিলন নিবিঘœ নয়; তাই
চলে এসেছি অপার্থিবতার সীমাহীনতায়।
তোমার কল্পনার মহাসমুদ্রে আর স্বপ্নের মহাকাশে
বারে বারে আসি ফিরে, আসবো ফিরে
অবাধ স্বাধীনতায় !

No comments:

Blogger Widgets