Social Icons

ভালবাসার মানুষটিকে কি কখনো কাঁদানো যায় ?

ভালবাসা কথাটা প্রত্যেকের মনকেই হালকা একটা নাড়া দিবেই। প্রেমে পড়ে নি এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। হোক সে বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেম, বা বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রেম। প্রেমে পড়ে যাওয়া খুবই সহজ। কেউ সুন্দর করে আপনার দিকে একবার তাকালো, একটা লাজুক হাসি উপহার দিল, অথবা হলো আপনাদের মাঝে তুমুল ভুল বুঝাবুঝি আর ঝগড়া, যেন কেউ কাউকে দেখতে পারেন না, এই খুনসুটির রেশ ধরে তারপর যথাক্রমে বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালবাসা! এই ভালবাসার কতো যে রূপ, আর কতোভাবেই না তা আপনার উপর এসে পড়তে পারে। সত্যি বলতে মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকেই ভালোবাসা পেতে চাই, কেউ আমাদের জন্য ‘কেয়ার’ করে এমনটা দেখতে চাই। আমরা হতে চাই কারো জীবনের ‘স্পেশাল’ একজন। প্রকৃতিগত কারণেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করি।

প্রেমের সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। লোকমুখে খুব চলে এমন একটা কথা হলো – ‘ভালোবাসায় শুধু দিয়ে যাও, কিছু পাবার আশা করো না’ ; সত্যিকার ভালোবাসা নাকি সেটা যখন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা যায়, যখন প্রিয় মানুষটির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে দেয়া যায়, নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা না ভেবে তার সুখের কথাই শুধু চিন্তা করতে হয়। আসলে এটা কি সম্ভব? মানুষের নিজের কিছু চাওয়া-পাওয়া তো থাকবেই, তা যতক্ষণ পূরণ না হচ্ছে সে কীভাবে সুখী হবে?

বর্তমান সমাজে প্রায় প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের বিবাহ পূর্ববর্তী সম্পর্ক আছে। তারা বলে ‘প্রেম’ - এই প্রেমে কয়জন সুখে আছে? সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিই দেখা যায় আপনাকে সবচেয়ে বেশি ‘হার্ট’ করে, কষ্ট দেয়, কখনও বা আপনাকে অবহেলা করে। আপনি কি তার অবহেলার পাত্র? আপনাকে সে ভালবাসে ‘নিজের জীবনের চেয়েও বেশি’ অথচ আপনার প্রতি তার আচরণ যাচ্ছেতাই। যখন আপনাকে দরকার হয় আপনার কাছে আসে, ভালো ব্যবহার করে, আবার মুহূর্তেই আপনার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিতেও তার বাধে না। আপনাদের দিনে দুইবার ঝগড়া হয়- তুচ্ছ কারণে। আপনাদের রিলেশনের ‘মেইক আপ’ আর ‘ব্রেইক-আপ’ চলতেই থাকে। আপনার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় যেন ভালবাসার আরেক নাম বেদনা। অথচ আপনি তারপরেও তার কাছেই আবার ছুটে যান। প্রাণ উজাড় করে ভালবাসেন।

মাঝে মাঝে প্রেমের ঘটনাগুলা এমন হয়, আপনি যাকে এতো ভালবাসেন সে হয়ত আপনাকে পাওয়ার যোগ্য পর্যন্ত নয়। সে হয়ত কোন মাদকাসক্ত, ধূমপায়ী, আপনি সারাজীবন যা অপছন্দ করে এসেছেন, কিন্তু ভালবাসার মানুষটিকে পাবার জন্যে তাও মেনে নেন। হয়ত আপনি প্রেমে পড়েছেন এমন একজনের যে কথায় কথায় আপনার সাথে রাগ করে, আপনাকে ভুল বুঝে, আপনাকে সবকিছুর জন্য দোষারোপ করে তাও আপনি বুকে পাথর বেঁধে মুখে হাসি টেনে তার কাছেই ফিরে যান কিন্তু কেন?

বার বার সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবার কথা ভেবেও আপনি পারেন না। আপনি শুধুই তাকেই মিস করেন। আপনি শুধু তাকেই ভালবাসেন এতোকিছুর পরেও।

অনেকে আছে, প্রেম করার দু’ বছর পর জানতে পারে, তার প্রিয় মানুষটির জীবনে আরো একজন আছে! আরেক ছেলে/মেয়ের সাথে সম্পর্ক। এরপরেও আপনি ক্ষমা করে দেন। কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন।

ব্যাপারটা আসলে ‘ভালোবাসা’-র মহৎ প্যাকেজিং এ নিজেকে হাজির করলেও মূলত বিষয়টা অতো মহান নয়। আপনি একজনকে ভালবেসে অবশ্যই কিছু পাচ্ছেন। ‘আপনার’ নিজের কাছে ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বলতে ‘ভালো লাগে’, আপনার কাছে মনে হয় ঐ মানুষটি ছাড়া ‘আপনি’ জীবনে চলতে পারবেন না, ‘আপনার’ বেঁচে থাকা অর্থহীন। তাই নিজের মনের এই তীব্র অনুভূতির জন্য স্বার্থপরের মত আপনি নিজেই মানুষটির পিছনে ধেয়ে যান। সব দুঃখ-কষ্ট, যা মেনে নেয়া যায়না এমন সব ব্যবহার, মনটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় এমন কথা সহ্য করেও অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে আপনি তারই কেনা গোলাম হয়ে পড়ে থাকেন, কারণ আপনার কাছে তার সাথে কাটানো সময়গুলো যেন অনন্য মনে হয়, সে আপনাকে দু’টি ভালবাসার কথা বলেছে- এমনটি তো কেউ বলে নি! সে আপনার কথা মন দিয়ে শুনেছে, আপনার হাতে হাত রেখেছে এসব মুহূর্ত আপনাকে বাধ্য করে তার কাছেই ফিরে যেতে। আপনি স্বীকার করুন বা না করুন- মোটের উপর তার সাথে আপনার এমন কিছু আনন্দঘন সময় আছে, যেটা পাবার আশায় আপনি তার অত্যাচারগুলিও সহ্য করে নেন।

কিন্তু একটা সম্পর্ক কি এমন হওয়া উচিত যেখানে বছরের ৩৬৫ দিনেই কষ্ট পেতে হবে। যেখানে সে আপনার কথা ভাবছে না, ভাবছে তার নিজের কথা। সে আপনাকে কষ্ট দিয়েও মজা পাচ্ছে। আপনার পছন্দ-অপছন্দের থোড়াই পাত্তা দেয় সে। এমন একটা বন্ধনে নিজেকে আপনি বেধে রাখছেন শুধু একটু ‘ভালোবাসা’ পাবার আশায়? দুইদিক থেকেই এখন সম্পর্কটা হয়ে গেল ‘নিজের আকাঙ্ক্ষা’ ‘নিজের ইচ্ছা’ কে গুরুত্ব দিয়ে। তাই আজীবন ভালোবাসার বন্ধনে থেকেও শেষ পর্যন্ত মনে হয় ‘আমি কতো একা’... দিনশেষে যেন আপনার কষ্টগুলো বুঝার মত কেউ-ই নেই। কখনো আপনি কাছের বন্ধুকে ফোন করে বুঝানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেন, কিন্তু এভাবে প্রতিদিন আর কতো? তাই একসময় নিজেই ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন। ‘ভালোবাসা’ যা আপনাকে আনন্দ দেয়ার কথা ছিল, তা হয়ে যায় আপনার জীবনের চরম একটা ‘পেইন’ ! কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না!

মানুষের এই ভালোবাসা পাওয়া, ভালোবাসতে চাওয়ার অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তা কিভাবে সঠিকভাবে পূরণ হবে তা আল্লাহ খুব ভালোভাবে বলে দিয়েছেন। ইসলামে প্রেমপূর্ণ সম্পর্কের একমাত্র মাধ্যম বিয়ে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন সঙ্গী, আর তাদেরকে বানিয়েছেন পরস্পরের জন্য ‘লিবাস’ অর্থাৎ পোশাক যে আপনার দোষ-ত্রুটি গুলো ঢেকে রাখবে, আপনাকে রক্ষা করবে, যে আপনার সাথে থেকে আপনার সৌন্দর্য্য বর্ধন করবে। এমন একজন নয় যে আপনাকে ‘ব্যবহার’ করবে ইচ্ছামত তারপর দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। আপনি ভালোবাসা পাবার জন্য আকুল হন, বিয়ের আগে প্রেম না থাকলে, কীভাবে বিয়ের পরে তাকে ভালোবাসবেন বুঝতে পারেন না! অথচ আল্লাহ তা’আলার কতো সহজ হিসাব, কতো দয়া। তিনি বলেন, বিয়ে হলে তিনিই আপনার মাঝে সৃষ্টি করে দিবেন দয়া, মমতা আর প্রেম। যে আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করতে সক্ষম, তিনি কি আপনাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারবেন না?

স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা আছে ইসলামে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি সেরা যে তার স্ত্রীর কাছে সেরা (স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করে)’ - এ কথাটি যেই পুরুষ মেনে চলেন তিনি কীভাবে তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন? স্ত্রীর প্রতি তার আচরণ হবে নম্র, ভালবাসায় মেশানো কথা দিয়ে তিনি বউ এর মন জয় করবেন, স্ত্রী কে সম্মানের সাথে দেখেশুনে রাখবেন। তেমনি নারীদের প্রতি বলা হয়েছে, যদি একজন মুসলিমাহ নামাজ পড়ে, রমযান মাসে রোজা রাখে, পবিত্রতা রক্ষা করে এবং স্বামীর কথা মেনে চলে তাহলে তাকে বলা হবেঃ ‘যে দরজা দিয়ে খুশি জান্নাতে প্রবেশ করুন’.. একজন স্ত্রী যিনি আল্লাহকে ভয় পান আর জান্নাতে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি কি পারবেন স্বামীকে কষ্ট দিতে? স্বামীর ভালো কথা না শুনতে? তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন কীভাবে স্বামীকে খুশি করা যায়।

এবার চিন্তা করে দেখুন, যার মাঝে এই আল্লাহর ভয় নেই, কী তাকে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করা থেকে বাঁধা দিবে? কোন মহৎ কারণে সে আপনার কথা নিজের কামনা-বাসনার চেয়ে বেশি চিন্তা করবে? অনেককে দেখেছি যারা চুটিয়ে প্রেম করে বিয়ে করবার পরেও বিবাহ জীবনে সুখী হয় না। এর কারণ অল্প বয়সের তীব্র আকর্ষণ বেশিদিন টিকে থাকে না। শারীরিক সৌন্দর্য্যের মোহ দিয়ে বেশিদিন কাউকে ভুলিয়ে রাখা যায়না, তাছাড়া চরিত্র আচার-ব্যবহার বাদে টাকা-পয়সা, রূপ-সৌন্দর্য্য এ সবই ক্ষণস্থায়ী। বিয়ের কিছুদিন পর তাই বউ কে মনে হয় বোরিং, বউ রেখে অফিসের কলিগটাকেই বেশি সুন্দর লাগে। স্বামীকে মনে হয় ‘কই আগের মত তো আর ভালবাসে না’ এর চেয়ে আমার বন্ধুটাই তো আমার ফিলিংস এর বেশি কদর করে। এভাবে সম্পর্কে নানা রকম টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। 

যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে আজ ভালবাসছে, সে আগামীকাল নিজের শখের বশে অন্য কারো কাছে ছুটে যেতেও দ্বিধা করবে না। নিজের ফ্রিডম থেকে যে নিজের সৃষ্টিকর্তাকে অবজ্ঞা করতে পারে, সে আপনাকে অবজ্ঞা করতে পারবে না? তার নিজের কি করা উচিত সেটায় সে আর কারো কথা শুনে না। আপনার কথা কেন শুনবে? তার মাঝে দায়িত্ববোধ আসে নিজের পছন্দমত সময়ে, তাই আজ সে আপনার দায়িত্ব নিলেও কাল সংসার তার কাছে বোঝা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দুজন মানুষ আল্লাহর ভয়ে একে অপরকে ভালবসাবে, শ্রদ্ধা করবে, পরিবারের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিবে- এই ভালোবাসার মাঝেই আছে প্রেম, মায়া, শান্তি। এছাড়া রাস্তাঘাটের কোনাচিপায় লুকিয়ে যেই দুইদিনের আবেগময় প্রেম চলে তা খুবই সস্তা। খুবই ভঙ্গুর।

No comments:

Blogger Widgets